ওয়েব ব্রাউজারের কথা যখন আসে তখন মূলত গুগল ক্রোম আর মজিলা ফায়ারফক্সের কথাই চলে আসে বেশির ভাগ সময়। পিসিতে এই দুটি ব্রাউজার আর এন্ড্রয়েডে ইউসি ব্রাউজার আমরা বেশি ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও মাইক্রোসফট এডজ কিংবা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহারকারীদেরও মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু দুনিয়াতে এই কটি ব্রাউজার ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি চমৎকার এবং সুন্দর ব্রাউজার রয়েছে। হয়তো সেগুলো আমরা কিংবা আমাদের আশেপাশের কেউ ব্যবহার করে না বিধায় তাদের সম্পর্কে আমরা জানিও না!
টেকটিউনসে আমি এখন প্রায় সব বিষয় নিয়েই টিউন করার চেষ্টা করি। তাই ভাবলাম এই ব্রাউজার সেক্টরটি নিয়েও একটি টিউন লেখা যায়! তাই যে ভাবা সেই কাজ! আজকের টিউনে আমি এমন ১০টি বিকল্প ওয়েব ব্রাউজারের খোঁজ নিয়ে এসেছি যেগুলো আপনি হয়তো আগে কখনো ব্যবহার করেননি কিন্তু ব্রাউজারগুলো আসলেই ব্যবহারযোগ্য এবং চমৎকার। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনে চলে যাই!
১) ওপেরা নিয়ন!
ওপেরা ওয়েব ব্রাউজার অনেক আগে আমি নিজেই ব্যবহার করতাম, কিন্তু বিশেষ করে ফায়ারফক্স আর ক্রোমের এই যুগে ওপেরা ব্রাউজার আর ব্যবহার করা হয়ে উঠে না। কিন্তু ২০১৭ সালের শুরু দিতে ওপেরা ব্রাউজারের নতুন সংস্করণ Opere Neon বাজারে ছাড়ে ওপেরা কোম্পানি। ওপেরা কোম্পানি ব্রাউজার জগতে নিজেকে আবারো প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় দেখার জন্য তাদের এই নতুন সংষ্করণটি বাজারে ছেড়েছে।
এই ব্রাউজারে ব্যবহার করা হয়েছে Blink Rendering Engine যেটি দিয়ে অফিসিয়াল অপেরাও বানানো হয়ে থাকে। ব্রাউজারটিতে বেশ কিছু ইউনিক নতুন ফিচার আনা হয়েছে ব্যবহারকারীদেরকে আকর্ষণ করার জন্য। যারা আগে ওপেরা ব্যবহার করতেন বা যারা এখনো ওপেরা ব্যবহার করেননি তাদের সবাইকেই অপেরার এই নতুন সংস্করণের ব্রাউজারটি একবার পরখ করে দেখতে পারেন।
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে।
২) ভিভাল্ডি!
Vivaldi ব্রাউজার হচ্ছে একটি নতুন ব্রাউজার যেটিতে Chromium প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। মানে এতে আপনি ক্রোমের মতোই মজা পাবেন কিন্তু ব্রাউজারটি ক্রোমের থেকেও বেশ কটি ইউনিক ফিচার দিচ্ছে এদের ব্যবহারকারীদের। যেমন এই ব্রাউজারটিতে আপনি প্রায় সবকিছুই নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। এই ব্রাউজারটি নিয়ে গতকালই একটি ডেটিকেটেড টিউন করেছিলাম আমি।
➡ ব্রাউজারটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই টিউনে চলে যান
৩) ম্যাক্সথন
ম্যাক্সথন ব্রাউজারটি তার ইউনিক ফিচার ক্লাউড বেইসড একাউন্ট নিয়ে বেশ প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের এই ক্লাউড বেইসড একাউন্ট দিয়ে আপনি আপনার সকল ডিভাইসের ডাটা একসাথে সিঙ্ক করে নিতে পারবেন। এছাড়াও তাদের এই ক্লাউড সার্ভিসের রয়েছে একটি ফিচার যার নাম ক্লাউড পুশ যেটার মাধ্যমে আপনি যেকোনো কনটেন্ট আপনার বন্ধুদের সাথে ইমেইল বা টেক্স মেসেজের সাহায্যে শেয়ার করতে পারবেন।
ম্যাক্সথন ব্রাউজারে রয়েছে বিল্ট ইন RSS reader, নোটপ্যাড, পাসওর্য়াড ম্যানেজার, ভাচুর্য়াল মেইনবক্স এবং একটি এডব্লক প্লাস। এছাড়াও ব্রাউজারে রয়েছে একটি Reader Mode যেটার মাধ্যমে যেকোনো আর্টিকেল বা পেপাল আপনি সাচ্ছন্দ্যে পড়তে পারবেন। ম্যাক্সথন ব্রাউজারে একই সাথে দুটি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে একটি হচ্ছে Trident এবং আরেকটি হচ্ছে WebKit, যেগুলো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এবং সাফারি ব্রাউজারে সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এই লিংক থেকে।
৪) টর্চ!
Torch হচ্ছে আরেকটি Chromium ভিক্তিক ব্রাউজার সেটি বিশেষ ভাবে মিউসিক এবং গেমিংয়ের জন্য নির্মিত হয়েছে। ব্রাউজারে রয়েছে একটি বিল্ট ইনট ইউটিউব বেইসড স্ট্রিমিং সার্ভিস যার নাম Torch Music. এছাড়াও Torch Games সার্ভিসটি আপনাকে বিভিন্ন ওয়েব ভিক্তিক গেমসে আপনাকে এক ক্লিকে একসেস দিবে। এছাড়াও ব্রাউজারটিতে রয়েছে সহজলভ্য ড্রাগ এন্ড ড্রপ ফিচার। ব্রাউজারটি আশা করবো একটু ব্যতিক্রমী ধর্মী ব্যবহারকারীদের কাছে ভালোই লাগবে! এছাড়াও ব্রাউজারটিতে রয়েছে বিল্ট ইন্ট টরেন্ট ডাউনলোডার!
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এই লিংক থেকে।
৫) এপিক প্রাইভেসি ব্রাউজার!
আপনি যদি গুগল ক্রোমকে লাইক করেন কিন্তু গুগলের যাবতীয় এডভারটাইজাদের জ্বালাতনে ভুগছেন তারা এই Epic Privacy Browser টি ব্যবহার রে দেখতে পারেন। এটির সাথে গুগল ক্রোমের আপনি তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাবেন না তবে এটির নামের মতোই ব্রাউজারটিতে প্রাইভেসি রক্ষায় বিশেষ কিছু ফিচার রয়েছে যেমন বিল্ট ইন প্রক্সি, অলওয়েজ অন প্রাইভেট ব্রাউজিং, বিল্ট ইন ব্লকারস এবং বিল্ট ইন ভিডিও ডাউনলোডিং টুল যেটায় আপনি ভিডিও ডাউনলোড করতে পারবেন অতিরিক্ত কোনো সফটওয়্যার ছাড়াই! তো যারা প্রাইভেসি নিয়ে বেশিই সেন্সিটিভ তারা এই ব্রাউজারটি পরখ করতে দেখতে পারেন।
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
৬) পেল মুন!
ফায়ারফক্সের একদম পুরাতন সংষ্করণটি আপনার ভালো লাগতো? কিংভা পুরাতন সংস্করণটি মিস করেন এখনো? পুরাতন ফায়ারফক্স এর লুক কিন্তু নতুনের মতো সব ফিচার নিয়ে Pale Moon ব্রাউজারটি এখন বাজারে রয়েছে। ব্রাউজারটি আগে Fork ব্রাউজার নামে বাজারে ছিলো।
নামে ভিন্ন হলেও কাজে একই এই ব্রাউজারটির ইঞ্জিন হলো Goanna যেটি ফায়ারফক্স লেগেসিতে ব্যবহৃত হতো। পুরাতন ইঞ্জিন আর পুরাতন ফায়ারফক্স মানে কাজেও সেরকম। এই ব্রাউজারে আপনি old-school add-ons গুলো এখনো ব্যবহৃত করতে পারবেন!
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে।
৭) কমন্ডো আইস ড্রাগন!
বেশ নামও বটে! কমোন্ডো হচ্ছে একটি সিকুরিটি ফার্ম আর তাদের আইস ড্রাগন হচ্ছে তাদের একটি ব্রাউজার সেখানে সিকুরিটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যারা ব্রাউজারের সিকুরিটি নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন তারা নিশ্চিন্তে এই সিকিউর ব্রাউজারটি ব্যবহৃত করতে পারেন।
ব্রাউজারটিতে বিল্ট ইন ওয়েবপেজ স্ক্যানার রয়েছে, রয়েছে কমোন্ডোর সিকুউর ডিএনএস সার্ভিস এবং ফিশিং এভং স্প্যাইওয়্যার সাইট থেকে অটো ব্লকিং তো রয়েছেই! ফায়ারফক্সের উপর নির্মিত এই ব্রাউজারটিতে ফায়ারফক্স এর মতোই আপনি সকল সুবিধা পাবেন।
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এই লিংক থেকে।
৮) গোষ্ট ব্রাউজার!
গোষ্ট ব্রাউজার! ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের তৈরি আরো একটি ব্রাউজার এটি। তবে এই ব্রাউজারের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর প্রোডাক্টিভিটি এবং এই ব্রাউজারটিতে একই উইন্ডোতে আপনি একের অধিক ব্রাউজার সেশন চালু করতে পারবেন এবং রান করতে পারবেন।! এবং প্রতিটি সেশনের জন্য রয়েছৈ আলাদা Cookie jar মানে আপনি একই উইন্ডোতে একাধিক সোশাল নেটওর্য়াকে লগ ইন অবস্থায় থাকতে পারবেন।
আর প্রতিটি সেশনের ট্যাবের কালার নিজে নিজেই আলাদা হয়ে থাকবে! ব্রাউজারটি মূলত ফ্রি হলেও ফ্রি সংস্করণে এর ফিচারগুলোও লিমিটেড অবস্থায় থাকবে। ফুল সংষ্করণের জন্য আপনাকে মাজে ১০ থেকে ১৫ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে ব্রাউজারের পেছনে। আর ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের তৈরি বিধায় এতে আপনি ক্রোম ওয়েব স্টোরও ব্যবহার করতে পারবেন।
➡ গোষ্ট ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এই লিংক থেকে।
৯) মিডোরি!
Midori মূলত একটি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি একটি হালকা ধাঁচের ব্রাউজার তবে ব্রাউজারটির উইন্ডোজ সংষ্করণও রয়েছে যেটি আপনি চাইলেই ট্রাই করে দেখতে পারেন। এই ব্রাউজারটি মূলত একটি সিম্পল ধাঁচের ব্রাউজার যেটির সাইজও অনেক কম মানে এটি হচ্ছে lightweight ব্রাউজার। কারণ লিনাক্স সিস্টেমের জন্য তৈরি তো তাই কম সাইজের মধ্যেই একে নিমার্ণ করা হয়েছে।
ব্রাউজারটির ইন্টারফেস অনেকটা উইন্ডোজ এক্সপির মতো। যারা সিধে সাধা ব্রাউজার চান তাদের জন্যই এই মিডোরি ব্রাউজারটি নির্মিত হয়েছে।
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এই লিংক থেকে।
১০) এভান্ট ব্রাউজার।
এভান্ট ব্রাউজার হচ্ছে একটি কমপ্লেক্স ব্রাউজার! তাই এটি আজকের আমাদের লিস্টের একদম শেষে রয়েছে। কারণ এভান্ট ব্রাউজারটিতে রয়েছে Tri-Core Rendering Engine. কারণ ব্রাউজারটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একই সাথে তিনটি ইঞ্জিন। এটি ফায়ারফক্স, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এবং সাফারি ব্রাউজারের ইঞ্জিনগুলো একত্রে ব্যবহার করে নির্মিত করা হয়েছে। এভান্ট ব্রাউজারটিকে আপনি ব্রাউজারের লাক্সারি মডেল বলতে পারেন।
কারন কি নেই এতে? রয়েছে ভিডিও স্নিফার, অলওয়েজ অন টপ বিল্ট ইন ফিচার, বিল্ট ইন টাক্স ম্যানেজার, বিল্ট ইন প্রক্সি সার্পোট, বিল্ট ইন ওয়েব স্ক্যানার, বিল্ট ইন ফাইল ম্যানেজার ইত্যাদি। তবে এভান্ট ব্রাউজারটির ইন্টারফেস একদমই উইন্ডোজ এক্সপির মতো। এই ক্ষেত্রে এটাকে আপনি আধুনিক বলতে পারেন না বটে!
➡ ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন এই লিংক থেকে।
তো এটা দিয়ে আজকের টিউনটি শেষ করছি। অবশ্যই এই ১০টি ব্রাউজার ছাড়াও আরো অনেক ব্রাউজার বাজারে ছড়িয়ে রয়েছে যেগুলো আমরা ব্যবহার করি না। আপনি যদি এদের ছাড়াও অন্য কোনো ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেটা আমাদের টিউমেন্টে জানাতে ভূলবেন না যেন