ডেস্ক-
ঠাকুরগাঁওয়ে ১৯৭৭-৭৮ সালে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস স্থাপন করে এই রেশম কারখানাটি। কিন্তু ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর লোকসানের অজুহাতে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১৫ বছর পর ৫ হাজার কৃষকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ঠাঁকুরগাওয়ের এই রেশম কারখানাটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা রেশন কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনও সময় কারখানাটি চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।’
এরআগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ঠাকুরগাঁওয়ে রেশম বোর্ড চালুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি টিম সোমবার (৩ এপ্রিল) কারখানাটি পরিদর্শন করেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, রেশম কারখানাটি ইতোমধ্যে সার্কের একটি প্রতিনিধি দল ও মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্য বিশিষ্ট টিম পরিদর্শন করেছে। কারখানাটি চালুর লক্ষ্যে সরকার খুবই আন্তরিক। এটি চালু হলে দেশে সর্বোচ্চ মানের কাপড় তৈরি হবে ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
চাষি ও স্থানীয় জনগণের মতে, মিলটি ঐতিহ্যগত কারণে চালু করা দরকার। চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তাছাড়া এখানকার কাপড় অত্যন্ত মূল্যবান। কাঁচামালের কোনও অভাব হবে না।
রেশম চাষি আলাউল জানান, এখনও রেশম চাষের যাবতীয় দক্ষতা হাতে নিয়ে তারা এত বছর ধরে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেছেন কারখানাটি নতুন করে চালুর জন্য।
এখন তাদের অন্য ফসল ফলিয়ে দরিদ্র জীবনযাপন করতে হয়। কারখানাটি চালু হলে তারা আবারও একটু স্বচ্ছলতার মুখ দেখবেন বলে জানান চাষি শাহ আলম ও তার স্ত্রী জমিলা।
উল্লেখ্য, এক সময় ঠাকুরগাঁও ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানায় উৎপাদিত হতো মসৃণ সিল্ক কাপড়। ১৫ বছর আগে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে প্রায় অর্ধশতাধিক তুঁতের বাগান ছিল। কিন্তু তি-নির্ধারকদের টানাপোড়েন ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর উদাসীনতায় দিনে দিনে এই কারখানাটিকে লোকসানে ফেলায় রেশম চাষির সংখ্যা ৫ হাজার থেকে কমে ২ হাজারে এবং বাগানের সংখ্যা কমে আসে ১৫-২০টিতে। রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে একাধিকবার বন্ধ কারখানা চালুর ঘোষণা পেলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রসঙ্গত, । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও প্রায় ১৫-২০টির মতো বাগান টিকে আছে যেসব বাগান থেকে পলু পালনের মাধ্যমে সুতা উৎপাদন করেন রেশম কর্মীরা। এক সময় ঠাকুরগাঁও ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানায় উৎপাদিত হতো মসৃণ সিল্ক কাপড়। অথচ নীতি-নির্ধারকদের টানাপোড়েন ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর উদাসীনতায় দিনে দিনে এই কারখানাটিকে লোকসানে ফেলা হয়। বিএমআরই করা হবে এমন কথা বলে হঠাৎ করে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ কারখানা চালু করার কথা বলে একাধিকবার রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘোষণা পেলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
১৯৯৫ সালে রেশম কারখানাটিতে আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করলেও ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহৃত থাকায় রেশম কারখানার ৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে।
No comments:
Post a Comment