কেমন আছেন আতিয়া মহলের বোমা হামলায় আহতরা
প্রকাশঃ এপ্রিল ৬, ২০১৭
ডেস্ক-
সিলেটের শিববাড়ী এলাকার আতিয়া মহলের বাইরে বোমা হামলার ঘটনায় আহতরা এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে। তাদের মধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। এরা প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে তাদের পরিবার-পরিজনরাও শঙ্কায় রয়েছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই গ্রামের ফারুক মিয়া। আতিয়া মহলের ভিতর সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষ—
এমন গুঞ্জন শুনে ২৫ মার্চ সন্ধ্যার পর ভিড় জমান পাশের রাস্তায়। গোটাটিকর দাখিল মাদ্রাসার সামনের রাস্তায় শত মানুষের ভিড়ে ফারুক মিয়াও ছিলেন একজন। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘটে বিস্ফোরণ। জ্ঞান যখন ফেরে তখন ফারুক মিয়া নিজেকে আবিষ্কার করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বোমার স্প্লিন্টারে তার পায়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় ক্ষতের। গত মঙ্গলবার রাতে ওসমানী হাসপাতালে অপারেশন করে কেটে ফেলা হয়েছে এক পা। এখন তিনি রয়েছেন চিকিৎসকের নিবিড় পরিচর্যায়।
ফারুক মিয়ার মতো অবস্থা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের শিরিন মিয়ার। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে তার ডান পায়ের দুটি আঙ্গুল উড়ে গেছে। এ ছাড়া পা, পেট ও মাথায় বিদ্ধ হয়েছে বোমার স্প্লিন্টার।
পঙ্গুত্ববরণের আশঙ্কা নিয়ে ওসমানী হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিরিন মিয়া জানান, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। উৎসুক হিসেবে তিনি আতিয়া মহলের পাশের রাস্তায় অন্য লোকজনের সঙ্গে ভিড়ে মিশেছিলেন। বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন তিনি। এর পর থেকে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তার চিকিৎসা করলেও সুস্থ হওয়ার পর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারের কাছে আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কদমতলীর নাজিম উদ্দিনের পেট, পা ও মাথায় বোমার স্প্লিন্টার লেগেছে। উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক দেবপদ রায় প্রতিবেদককে বলেন, শিববাড়ী আতিয়া মহলের বাইরের রাস্তায় দুই দফা বোমা হামলায় আহত ৫০ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। বাকি ৪৩ জনের সবার শরীরে বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৩৭ জনকে। গুরুতর আহত ৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ১ জনের এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এদিকে বোমা হামলার ঘটনায় আহতদেরও পর্যবেক্ষণে রেখেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বোমা হামলার অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে তারা মনে করছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মূসা বলেন, ‘বোমা হামলায় আহত ও নিহত কেউই আমাদের তদন্তের বাইরে নয়। যারা নিহত হয়েছেন তাদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছি। আহতদের সঙ্গেও আমরা কথা বলব। কেউ বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা বা তারা কাছ থেকে হামলাকারীকে দেখেছেন কিনা এ বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আহতদের কাছ থেকে হামলাকারী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে আতিয়া মহলের ভিতর সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় পাশের রাস্তায় বোমা হামলা হয়। একটি বোমার বিস্ফোরণে চারজন নিহত ও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুলিশের দুই পরিদর্শক ও র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন।
No comments:
Post a Comment